মঙ্গলবার, ২৪শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১০ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমাদের চোখ বেঁধে নিয়ে গেছে, সন্তান কোথায় তাও জানি না

০ টি মন্তব্য 1 ভিউ 7 মিনিট পড়ুন
অ+অ-
রিসেট করুন

প্রতিনিধিঃ

কাজী ওমর ফারুক , মোংলা
print news | আমাদের চোখ বেঁধে নিয়ে গেছে, সন্তান কোথায় তাও জানি না | সমবানী

“চোখ বেঁধে আমাদের তুলে নেয়। স্ত্রী আর সন্তানদের আলাদা বিমানে কোথায় যেন নিয়ে গেল। এখনো জানি না তারা বেঁচে আছে কি না…”—এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গুজরাট থেকে পুশ ইন হওয়া এক যুবক, যিনি এখনো খুঁজে ফিরছেন তাঁর পরিবারের খবর।

সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় বাহিনীর পুশ ইন করে বাংলাদেশে পাঠানো ৭৮ জন মুসলিম পুরুষ নিজেদের ওপর চালানো নির্মম নির্যাতনের করুণ বিবরণ দিয়েছেন মোংলা কোস্ট গার্ড (পশ্চিম জোন)-এর কর্মকর্তাদের কাছে। তাঁদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি ও ৩ জন ভারতীয় নাগরিক।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ১০ মে সকালে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট অফিসের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা ওইসব বিপর্যস্ত মানুষদের উদ্ধার করে। বন বিভাগের কর্মীরা জানান, হেঁটে আসা এসব মানুষের শরীরে ছিল না কোনো শক্তি, মুখে ছিল অনাহারের ক্লান্তি আর চোখে সীমাহীন আতঙ্ক।

উদ্ধারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ভারতের গুজরাটে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু গত ২৬ এপ্রিল রাতের অন্ধকারে আচমকা ভারতীয় পুলিশ তাঁদের ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বুলডোজারে। পরিবারের সামনে চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন। এরপর চোখ বেঁধে তাঁদের একটি সামরিক বিমানে তোলা হয়। আর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যাওয়া হয় আলাদা কোনো বিমানে, যার গন্তব্য আজও অজানা।

এরপর দীর্ঘসময় কোনো খাদ্য বা ওষুধ না দিয়েই তাঁদের রাখা হয় একটি জাহাজে। তারপর সেই জাহাজ থেকেই তাঁদের নামিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা সুন্দরবনের নির্জন চরে। অভিযোগকারীরা জানান, এ সময় ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা হয়, শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানো হয় এবং ধর্মীয় অবমাননারও শিকার হন তাঁরা।

They took us away blindfolded we dont even know where our children are.1 | আমাদের চোখ বেঁধে নিয়ে গেছে, সন্তান কোথায় তাও জানি না | সমবানী

অসহায় অবস্থায় তাঁরা হেঁটে পৌঁছান মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট অফিসে। সেখান থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানালে মোংলা কোস্ট গার্ড (পশ্চিম জোন) তাঁদের উদ্ধার করে। খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয় দিয়ে প্রাথমিক সেবাও দেওয়া হয়।

কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বলেন, “আমরা মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নিই। পরে ১১ মে তাঁদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে।

নির্যাতিতদের অধিকাংশেরই মুখে একটাই প্রশ্ন—“আমার স্ত্রী কোথায়? আমার সন্তানকে কি বাঁচিয়ে রেখেছে?” এই অনিশ্চয়তা, শারীরিক আঘাত আর মানসিক বিভীষিকার ভারে তাঁরা কেউ কেউ কথাও ঠিকমতো বলতে পারছেন না।

স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, এ ধরনের পুশ ইন, ধর্মীয় নিপীড়ন ও পরিবার বিচ্ছিন্নকরণের ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের পরিপন্থী। দ্রুত আন্তর্জাতিক তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন


Discover more from সমবানী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

আর্কাইভ
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন

Discover more from সমবানী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading