বাড়ছে মানুষের বিচরণ কমনছে জীববৈচিত্র্য।
প্রতিনিধিঃ
মো.জহিরুল ইসলাম,কুয়াকাটা

দেশের দ্বিতিয় বৃহত্তর পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত । প্রায় আরাই শত বছর আগে এই জনপদের সৃষ্টি, চারদিকে সবুজ শ্যামল বনায়ন আর বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি ছিল এই জনপদে। সমুদ্র সৈকত লাগোয়া বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ, শৈবাল, লাল কাঁকড়া এবং অতিথি পাখির বিচরণে মুখরিত হয়ে থাকতো একটা সাময় পুরো সৈকত।
কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরে এখানে তৈরী করা হয় পর্যটন ইয়ুথ ইন উদ্বোধনের মাধ্যমে কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে ধিরে ধিরে। কুয়াকাটা হয়ে ওঠে সারা বিশ্বের ভ্রমন পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয়। মানুষের সমাগম বাড়তে থাকলে দিনে দিনে এখানকার জীববৈচিত্র্যের উপর ব্যপক নেতিবাচক প্রভাব পরতে শুরু করে,ঘুরতে আসা পর্যটকরা প্রতিনিয়ত তাদের ব্যাবহৃত প্লাস্টিক, পলিথিন, ক্যান,প্লাস্টিকের বোতল সমুদ্র সৈকতে ফেলতে থাকে এবং সৈকতে পর্যটকরা অবাধে ঘোরাঘুরির ফলে জলজ উদ্ভিদ, লাল কাঁকড়া,বিভিন্ন ধরনের শৈবাল ও অতিথি পাখি হুমকির মুখে পড়ে এবং সৈকত থেকে ধিরে ধিরে তাদের বিচরণ কমতে থাকে।।

সরোজমিন ঘুরে দেখা যায়,কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে অনেক বনাঞ্চল ইতিমধ্যে সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং একটি বনের গাছ পুরোপুরি পুড়ে গেছে দেখে হয়তো মনে হবে এটিকে কেউ আগুন লাগিয়ে পুড়িয়েছে কিন্তু আসলে তেমনটা না এই গাছ গুলো প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় এবং বাতাসে অতিরিক্ত লবনের কারনে এমনটি ঘটেছে।
ফরিদপুর থেকে আসা মিজানুর রহমান বলেন, গত ১০/১১ বছর আগে একবার কুয়াকাটা এসেছিলাম তখন পূর্ব পাশে বড় একটা ঝাউবন ছিলো কিন্তু এবার এসে পেলাম না সমুদ্রে ভেঙ্গে গেছে,তিনি আরো বলেন কুয়াকাটার অন্যতম দর্শনীয় স্পট ছিলো লাল কাকড়ার চর আগের বার যত কাকড়া দেখেছি তাতে আমারা মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু এবার এসে তেমন লাল কাকড়া দেখতে পেলাম না।
কুয়াকটা ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক)’র প্রেসিডেন্ট ও পরিবেশ কর্মী জনাব, রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের সবারই দৃষ্টি দেওয়া দরকার। মানুষের পদচারণা যেখানে বেশি হয় সেখানটায় অতিথি পাখি,লাল কাকড়া থাকার কথা নয়। ওরা একটু নিরিবিলি নির্জনে থাকতে পছন্দ করে। আপনারা জানেন বর্তমান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রায় ২৮ কিলোমিটার। এই পুরো সমুদ্র সৈকত জুড়ে একটা সময় কিন্তু অতিথি পাখি, লাল কাকড়ার বিচরণ ছিল। এগুলো হারিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে আমাদের কুয়াকাটা এখন অনেক পর্যটক আসতেছে এবং অবাদে এই সমস্ত স্পটে পর্যটকরা ঘুরতেছে।
স্বাভাবিক পর্যায়ে কিন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষার যে বিষয়টা সেটা আমরা ভুলে যাই। আমাদের একটু খেয়াল রাখতে হবে,যে জায়গায় লাল কাকড়া এবং অতিথি পাখিরা আসে। সেখান থেকে একটু দূর থেকেই যেন আমরা উপভোগ করি। আপনারা যদি খোঁজ নিয়ে দেখেন, কুয়াকাটার আশপাশের যে দ্বিপগুলো আছে এবং নির্জন জায়গা গুলো আছে সেখানে কিন্তু প্রচুর লাল কাকড়া এবং অতিথি পাখি দেখা যাচ্ছে।।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের (এসপি) জনাব, আবুল কালাম আজাদ বলেন,পরিবেশ দূষণের কারণেই কিন্তু এই লাল কাকড়া এবং অতিথি পাখি সহ জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কুয়াকাটা আগত যে সমস্ত পর্যটকরা প্লাস্টিক এবং পলিথিন সমুদ্র পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেলতেছে সেটা কিন্তু একটা পর্যায়ে আবার সমুদ্রেই ভেসে যাচ্ছে।
পাশাপাশি প্রত্যেকটা প্রাণীর কিন্তু একটি নিজস্ব ভুবন থাকে। তাদের এই বিচরণের জায়গা গুলোতে প্রচুর ট্যুরিস্টদের আনাগোনা হচ্ছে এবং এই ট্যুরিস্টদের পদচারণার কারণেই কিন্তু এরা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।আমরা কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছি এবং পর্যটকদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা সচেতন করছি।
আরও পড়ুন
- বোরহানউদ্দিনে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশ
- ভোলায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৫ কারবারি আটক
- বোরহানউদ্দিনে খাবারে নেশা খাওয়াইয়া অচেতন করে ২ লক্ষ টাকা চুরি অসুস্থ্য ৫ জন
Discover more from সমবানী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.