বানোয়াট অভিযোগে পদ থেকে সরানোর চেষ্টার অপরাজনীতি জমজমাট; ক্ষুব্ধ ত্যাগী নেতারা
প্রতিনিধিঃ
জাহাঈীর আলম, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহে গ্রুপিং রাজনীতির ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে একজন আরেকজনকে পদ থেকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল বাড়ছে। যদিও বানোয়াট অভিযোগে পদ থেকে সরানোর চেষ্টার রাজনীতি বন্ধ করার পক্ষে দলটির সিনিয়র নেতারা। কিন্তু তৃণমূলে চলছে হযবরল অবস্থা। যে যেভাবে পারছে লোকাল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ এনে শীর্ষ নেতাদের নজরে এনে পদ থেকে সরাতে চাচ্ছে। এরপর একই পদটি নিজ বলয়ের আরেকজনকে ভাগিয়ে নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এতেও বিব্রত দলের দুঃসময়ে হাল ধরা সচেতন স্থানীয় নেতারা।
স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও মহানগরের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দের নেতৃত্বের বলয়ে চলছে ময়মনসিংহের রাজনীতি। তবে ময়মনসিংহ বিভাগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সারাদেশের মতো হামলা-মামলায় ঝর্ঝরিত ময়মনসিংহের নেতা-কর্মীরাও। শহরসহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও নির্যাতন থেকে মুক্তি পায়নি। কোনো কারণ ছাড়াই মামলায় নাম ঠুকে দেওয়া হতো এসব নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ফলে বাড়ি-ঘর ফেলে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে নানা জায়গায়। তবুও শীর্ষ নেতাদের ডাকে ঠিকই যথাসময়ে রাজপথে ঝাপিয়ে পড়েছে। গত ৫ আগস্টের পর দলের সুসময় চলছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করার চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। এরইমধ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে উঠেপড়ে লেগেছে স্বার্থবাদী কিছু নেতা। তারা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে
মিথ্যা অভিযোগ এনে বহিষ্কার করাতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এরপর নিজ বলয়ের আরেকজনকে নেতৃত্বে আনতে পায়তারা চালাচ্ছে। দলের দুঃসময়ে হামলা-মামলা ও নির্যাতিত নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে শীর্ষ নেতাদের নজরে এনে পদ থেকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠা ব্যক্তিদের চিন্হিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন
- ২১ আগস্টের মামলায় খালাস পাওয়া সিলেটে বিএনপি’র আনন্দ মিছিল শেষে বক্তারা, বিজয়ের মাসে প্রথম দিনে আরেকটি বিজয়ের খবর
- “জনগণের অধিকার প্রয়োগের জন্য যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষনা করুন”- ডা: জাহিদ
- ১ নং বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র কার্যালয় শুভ উদ্বোধন
বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানায়, ময়মনসিংহ মহানগরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ওলামা লীগের সভাপতি আবু সাঈদ। গত বুধবার তাকে জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। অন্য মামলায় গ্রেপ্তার না দেখিয়ে জমি সংক্রান্ত
মামলার কারণ সম্পর্কে জানতে ৬ নম্বর চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান দক্ষিণ জেলা যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ সম্পাদক মো. চাঁন মিয়া, ৭ নম্বর চর নিলক্ষিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি প্রার্থী কামরুজ্জামান ইসলাম আকন্দ, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ারুল ইসলাম লিটন ও জামায়াত নেতা মফিদুল ইসলামসহ দলের কর্মীরা থানায় যায়। এসময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাদের জানান- আবু সাঈদের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় চলে যান থানায় যাওয়া নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এটিকেও উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে নেয় বিএনপির একটি অংশ। তারা বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কাছে ওইসব নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নালিশ দিতে থাকে। কিন্তু ওইসব নেতারা বিগত আ.লীগ সরকারের আমলে মামলা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া স্বত্বেও তাদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তোলায় বিব্রত হয় ওইসব নেতা-কর্মীসহ সচেতন নেতা-কর্মীরা।
আবু সাঈদকে গ্রেপ্তারের পর থানায় যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা-কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তা জানতে একসাথে থানায় যায় নেতা-কর্মীরা৷ তখন ওসি জানিয়ে দেন, আপাতত রাজনৈতিক কোনো মামলা নেই আবু সাঈদের বিরুদ্ধে। তাই অন্য মামলায় আসামি না করে জমি সংক্রান্ত একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তাৎক্ষণিক তারা থানা থেকে চলে যান। এরইমধ্যে স্থানীয় বিএনপির একটি স্বার্থান্বেষী অংশ বলাবলি করতে থাকেন এবং স্থানীয়
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের জানাতে থাকেন- আ.লীগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে ছাড়াতে থানায় যাওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। মূলত বিএনপির ওই স্বার্থান্বেষী নেতারা মনগড়া তথ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে হামলা-মামলা, নির্যাতনের শিকার, মাসের পর মাস কারাগারে থাকা এসব নেতাদের বহিষ্কার করাতে উঠেপড়ে লেগেছিল। কিন্তু দ্বায়িত্বশীল নেতারা তাদের কুটচাল বুঝতে পারায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাঙন ধরানোসহ যারা মনগড়া তথ্য দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তৎপর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন দলকে ভালোবেসে দুর্দিনে রাজপথে অবস্থান নেওয়া নেতা-কর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহ বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, নিজেদের মধ্যে কোন্দল নয়; জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে। সামনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। এজন্য নিজেদের মধ্যে শত্রুতা না করে সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। জনগণের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। মনগড়া অভিযোগ তুলে একজন আরেকজনকে পদ থেকে সরানোর চেষ্টার প্রমাণ মিললে ওইসব সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
আবু সাঈদকে গ্রেপ্তারের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধে আবু সাঈদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়। ওই অভিযোগটি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া যায়। ফলে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ করে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, আবু সাঈদকে ছাড়াতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতা আমার কাছে তদবির করেনি। গত ৫ আগস্টের পর অনেক আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে। এ পর্যন্ত বিএনপির কোনো নেতা তাদের পক্ষে সুপারিশ করেনি। আবু সাঈদের রাজনৈতিক পদ সম্পর্কে আমার জানা নেই। তাকে জমি সংক্রান্ত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
আরও পড়ুন
- বোরহানউদ্দিনে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশ
- ভোলায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৫ কারবারি আটক
- বোরহানউদ্দিনে খাবারে নেশা খাওয়াইয়া অচেতন করে ২ লক্ষ টাকা চুরি অসুস্থ্য ৫ জন
Discover more from সমবানী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.