ভোলা তজুমদ্দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত
প্রতিনিধিঃ
মো:কবির হোসেন চাপরাশি, তজুমদ্দিন

ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র উপকূলীয় নারী ও কিশোরী মেয়েদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা উন্নয়নে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে আয়বৃদ্ধিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষন এবং প্রশিক্ষন শেষে উপকরন সরবরাহের মাধ্যমে উদ্যেক্তা তৈরির উদ্যেগ গ্রহণ করা, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা, দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ চরাঞ্চল সহ ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলোতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন সুবিধা এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং পরিবার ও সমাজ থেকে নারী ও কিশোরীদের প্রতি সকল ধরণের সহিংসতা যেমন- বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন, যৌতুক প্রথা দূরীকরণে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিদ্যমান আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যাগ গ্রহণ করা, এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় নারী ও কিশোরীদের টেকসই সুরক্ষায় স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থতা, ঝুঁকি ও চাহিদা বিবেচনায় অঞ্চলভিত্তিক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী টেকসই নীতি গ্রহন ও বাস্তাবায়নের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা ও অগ্রাধিকার বিবেচনায় অর্থবরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে কোস্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার উপজেলা পরিষদ-এর সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও মানববন্ধন শেষে উপজেলা প্রশাষন কর্তৃক আয়োজিত র্যালী ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহন করে কিশোরী দল ও নারী নেত্রীবৃন্দসহ অন্যান্য বক্তারা এই সমস্থ দাবিসমূহ তুলে ধরেন। মানববন্ধনে কিশোরী দলের সদস্য, নারী নেত্রী, শিক্ষক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ছাত্র-ছাত্রী, যুব প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিসিআর প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার, রাজিব ঘোষের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পিয়ার লিডার-রিক্তা, রুম্পা, যুব নেত্রী-মুক্তা চক্রবর্তি, জেলে পরিবারের প্রতিনিধি, নাছরিন বেগম, ছাত্র-রাহাত ও মোঃ শামীম হাওলাদার প্রমুখ।
নারী নেত্রী মুক্তা চক্রবর্তি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষনায় দেখা যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উপকূলীয় অঞ্চলে বাল্যবিয়ের গড় হার অনেক বেশি, যা প্রায় ৬৫-৭০শতাংশের মত। পরিবার ও সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ও দারিদ্রতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ কোনো না কোনোভাবে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এটা তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে কারনে বাল্যবিবাহের হার কমছেই না, তাই প্রয়োজন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় নারী ও কিশোরীদের জলবায়ু সক্ষমতা উন্নয়ন এবং সুরক্ষায় সমতার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ। এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য উপরোক্ত সুনিদৃষ্ট দাবী উত্থাপন করে।
শিক্ষার্থী রুম্পা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বহুমুখী আয়ের সন্ধান খুবই প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ এবং বিকল্প আয়ের সুযোগ সীমিত, জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই সুবিধাবঞ্চিত, খাদ্য সংকটসহ জীবনমান অতি দরিদ্রতাপূর্ণ। ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র পরিবারগুলো নেতিবাচক কৌশল অনুসরণ করছে, যেমন- সামান্য অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের জন্য বাল্যবিয়ে দিয়ে তাদের মেয়েদের স্কুল থেকে সরিয়ে নিচ্ছে, এছাড়াও যৌতুক ও নারীর প্রতি সহিংসতার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের প্রধান শিকার হচ্ছে নারী ও কিশোরীরা, অর্থনৈতিক অক্ষমতা তাদেরকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষনায় দেখা যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উপকূলীয় অঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার অনেক বেশি।
পিয়ার লিডার রিক্তা বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে না পারলে কোনো ভাবেই জেন্ডার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, কারন সমাজের সর্বস্তর অর্থের মানদন্ডে নিয়ন্ত্রিত, তাই আমরা মনে করি সরকারি-বেসরকারি সকল উন্নয়ন ও কর্মপরিকল্পনায় জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থতার হার বিবেচনা করে, ন্যায্যতার ভিত্তিকে জলবায়ু অর্থায়ন করতে হবে, তবেই জেন্ডার ভিত্তিক ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে। জলবায়ু অর্থায়নের ন্যায্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে জেন্ডার ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে
জেলে পরিবারের প্রতিনিধি, নাছরিন বেগম বলেন, নানাবিধ দুর্যোগ(নদীভাঙ্গন, বন্যা, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ততা ইত্যাদি) এর কারণে শষ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ পারিবারগুলো পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না, যে কারনে নারী, কিশোরী ও শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির সমস্যা প্রকট। বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অনেকেই এখনও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত, প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে এখানে নারী ও কিশোরী মেয়েদের বিকল্প আয়ের সুযোগ ও আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নকে সীমিত করে, তারা তাদের পরিবার ও সমাজ কর্তৃক মর্যাদার সাথে মত প্রকাশের অধিকার থেকে উপেক্ষিত হয়। পর্যাপ্ত ও সুরক্ষিত অবকাঠামোর অভাবে যেমন- জলবায়ু সহনশীল উপকূলীয় বেড়িবাধ, সাইক্লোন শেল্টার, আবাসন ইত্যাদির অভাবে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই সরকারকে এই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
মোঃ রাহাত-ছাত্র প্রতিনিধি বলেন বাল্যবিবাহ ও নারী প্রতিহিংসতার অন্যতম কারন দারিদ্রতা, আর বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের উপকূলী অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত বেকার হচ্ছে, ঘরবাড়ি হারিয়ে দরিদ্র হচ্ছে। তাই জলবায়ু অর্থায়ন হতে উপকূলীয় নারী ও কিশোরীদের বিকল্প আয়ের উদ্যোগ নিতে হবে, এক্ষেত্রে সরকারের সকল স্তরে পরিকল্পিত উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
মোঃ শামীম হাওলাদার বলেন, অভিযোগ, পরিবার ও সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ও দারিদ্রতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ কোনো না কোনোভাবে নারীরা প্রতিনিয়ত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এটা শারিরীক সমস্যার পাশাপাশি তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, পরিবারের প্রায় সব কাজই নারীরা করেন অথচ এ কাজের কোনো আর্থিক মূল্য ও স্বীকৃতি তাদের নেই। সকল প্রকার জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, সংশ্লিষ্ট আইনের প্রচার ও প্রচারণা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটিগুলো কার্যকর করা এবং বিদ্যমান আইনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি করেন তারা।
রাজিব ঘোষ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বহুমুখী আয়ের সন্ধান খুবই প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ এবং বিকল্প আয়ের সুযোগ সীমিত, জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই সুবিধাবঞ্চিত, আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের প্রধান শিকার হচ্ছে নারী ও কিশোরীরা, অর্থনৈতিক অক্ষমতা তাদেরকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই এসকল সমস্যা সমাধানে সরকারকে অবশ্যই জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ নারী ও কিশোরীর জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে।অন্যথায় নারী ও কন্যার অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায় যেমন সম্ভব হবে না, তেমনি জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার কার্যকর ভাবে সফল হবে না।
আরও পড়ুন
- বোরহানউদ্দিনে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশ
- ভোলায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৫ কারবারি আটক
- বোরহানউদ্দিনে খাবারে নেশা খাওয়াইয়া অচেতন করে ২ লক্ষ টাকা চুরি অসুস্থ্য ৫ জন
Discover more from সমবানী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.