রবিবার, ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাঙ্গাবালীর চরনজির দ্বীপ শিশুদের শিক্ষা আটকে আছে আদর্শ লিপিতে 

০ টি মন্তব্য 19 ভিউ 11 মিনিট পড়ুন
অ+অ-
রিসেট করুন

প্রতিনিধিঃ

মোঃমনিরুল ইসলাম, রাঙ্গাবালী,পটুয়াখালী
print news | রাঙ্গাবালীর চরনজির দ্বীপ শিশুদের শিক্ষা আটকে আছে আদর্শ লিপিতে  | সমবানী

বুড়াগৌরাঙ্গ ও তেতুলিয়া নদীর মোহনায় ভেসে ওঠা একটি দ্বীপের নাম চরনজির।
চল্লিশের দশকে ভেসে ওঠা এই দ্বীপটি ষাটের দশকে সরকারি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
এরপরে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন এসে চাষাবাদ শুরু করেন। আর এই চাষাবাদকে
কেন্দ্র করেই আশির দশকে জনবসতি গড়ে ওঠে এখানে। সময়ের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এখনো কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে শিক্ষারমত মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে পরেছে শতাধিক শিক্ষার্থীরা।
এমনকি শিক্ষা ব্যবস্থা আটকে আছেন আদর্শ লিপি বইয়ের মাঝে। বলছিলাম সাগর-নদী বেষ্টিত জনপদ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের অংশ চরনজিরের কথা।

রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে মোটরসাইকেল বা অটোরিকশা যোগে প্রায়
সাড়ে ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গহীনখালী লঞ্চঘাট, সেখান থেকে মাছ ধরার ছোট নৌকায় প্রায় ৪৫ মিনিট সময়ের ব্যবধানে বুড়াগৌরাঙ্গ নদী পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে হয় চরনজির দ্বীপে। সদর ইউনিয়ন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে বসবাসরত বাসিন্দারা। এখানকার লোকদের যাতায়াত ব্যবস্থায় দুর্ভোগের শেষ নেই। মাছ ধরার ছোট নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, প্রায় সাড়ে ৬শত লোকের
বাস এ ছোট্ট দ্বীপে। প্রকৃতি আর ভূ-পতিদের সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম
করে বেঁচে আছেন তারা। একদিকে প্রভাবশালীদের জমি দখল অন্যদিকে
প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে ভেসে

যায় রান্না ঘরের হাড়ি-পাতিলসহ আসবাবপত্র, আবার ভাটির টানে সব শুকিয়ে যায় গোসলের পানি টুকুও । একসময় নদীর পানি পান করতে হলেও সম্প্রতি সময়ে কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আর কোন বাড়তি নাগরিক সুবিধা নেই সেখানে। এখানে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অল্প বয়সেই

নদীতে মাছ ধরা ও ক্ষেতে চাষবাসের কাজ করার মতো পেশা বেছে নেয় ওইসব শিশুরা।
দ্বীপে বসবাসরত বাসিন্দা মজিবর হাওলাদার আক্ষেপ করে বলেন, ‘ ভাইরে, আমার চার মেয়ে- এক ছেলে। মেয়েদের পড়াশুনা করাতে পারিনি। ছেলেটার বয়স পাঁচ বছর হয়েছে পাশের এলাকা চরবিশ্বাসের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় দিয়ে আসছিলাম একদিন শীতের রাতে সেখানে থেকে পালিয়ে চলে আসছে। পরে আবার দিয়ে আসছি আবার বাড়ি ফিরে নিজের পায়ে নিজে শেকল লাগিয়ে আমাকে বলে আব্বা এইবার আমারে কেমনে দিয়া আসবা? আমার একলা ওখানে ভালো লাগেনা।’এই বলে কান্না ভেঙে পড়েন মজিবর। এখানে যদি একটা স্কুল হয় কোলের শিশুদের
অন্তত অন্য এলাকায় রেখে আসতে হবে না।

দ্বীপের আরেক বাসিন্দা মনির ফকির বলেন, ‘স্যার আমরা ১৯৯৪ সালের দিকে এই
চরে এসে বসবাস শুরু করি। এখানে কোন স্কুল না থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েদের
লেখাপড়া করাতে পারি না। কেউ নানা বাড়ি থাইকা পড়ে আবার কেউ দাদাবাড়ি
থাইকা পড়ে। আমরা খুব কষ্টে আছি চরে প্রায় ১১০ জনেরমত শিশু আছে কেউ
পড়াশোনা করে না। চারদিকে নদী যাইবে কই? এসময় শহিদুল নামের আর এক
বাসিন্দা বলেন, এখানের বাচ্ছারা পড়াশোনা করে না। একটু বড় হলেই বাবার সাথে
জাল ফেলতে নদীতে যায় অথবা হালচাষ করতে জমিতে কাজ করে। চারদিকে নদী থাকায় সবদিক থেকেই আমরা বঞ্চিত। এমনকি এখানে কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।

কয়েকদিন আগে একজন গর্ভবর্তী মাকে চিকিৎসার জন্য পাশের উপজেলা গলাচিপা নেওয়ার পথে ট্রলারই মারা গেছেন। একটি শিশুও মারা গেছে পানিতে ডুবে । কোন সুযোগ সুবিধাই নেই এখানে। তবে একটা স্কুল এখানে খুবই
জরুরী। তাহলে অন্তত অন্ধকার থেকে ছেলে মেয়েরা আলোর পথে আসবে।

এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিষ ঘোষ বলেন, চরনজিরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই প্রয়োজন। ওখানকার লোকজন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন এবং কাগজপত্র সাবমিট করেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে খুব শীঘ্রই একজন সহকারী শিক্ষা অফিসারকে ওখানে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করার জন্য বলা আছে। তার প্রতিবেদন হাতে পেলে সমস্ত কাগজপত্র জেলা অফিসে প্রেরণ করবো। এখন বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো নীতিমালা অনুয়ায়ী আবেদন করলে সরকার নিবন্ধনের ব্যবস্থা করবে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি প্রথম জানলাম। আমি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সাথে খোঁজ নিবো। যদি কোন প্রতিষ্ঠান না থাকে আমরা আমাদের
উর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। যেনো ওখানে দ্রুত একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি
করা হয়।

আরও পড়ুন


Discover more from সমবানী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

আপনি পছন্দ করতে পারেন

আর্কাইভ
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন

Discover more from সমবানী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading