মঙ্গলবার, ২৪শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১০ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ বইয়ের প্রকাশন সার্বিক অভিভাসী অভিজ্ঞতার প্রতিধ্বনি

০ টি মন্তব্য 3 ভিউ 12 মিনিট পড়ুন
অ+অ-
রিসেট করুন

প্রতিনিধিঃ

এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া, সিলেট
print news | উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ বইয়ের প্রকাশন সার্বিক অভিভাসী অভিজ্ঞতার প্রতিধ্বনি | সমবানী

‘উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ নাম দেখে মনে করবেন ইতিহাস। আবার কারো কারো মনে হতে পারে প্রবন্ধ; কারো বা মনে হবে ভ্রমণ কাহিনী; কারো বা মনে হবে গবেষণাকর্ম। আমি প্রথমে মনে করেছিলাম সমাজ ও সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষণা। কিন্তু গ্রন্থটি পড়ার পর আমার ধারণা অসার প্রমাণিত গলো। বুঝলাম এটি ওপরে বর্ণিত সবকটি সাহিত্য প্রত্যয়ের সমাহারে সমৃদ্ধ আর অপূর্ব নান্দনিকতায় সজ্জিত একটি জীবনীগ্রন্থ। ’

-‘উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বইটি সম্পর্কে এভাবেই মূল্যায়ন করলেন কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমীন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের বাতিঘর বুক ক্যাফেতে কানাডা প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক নজরুল মিন্টো রচিত ‘উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

ড. আমীন এই বইকে ‘সবকটি সাহিত্য প্রত্যয়ের সমাহারে সমৃদ্ধ আর অপূর্ব নান্দনিকতায় সজ্জিত একটি জীবনীগ্রন্থ হিসেবে মূল্যায়িত করলেও লেখকের মতে, তার এই বইটি একটি ‘নন ফিকশন ন্যারেটিভ’।

আর লেখক, রবীন্দ্রগবেষক মিহিরকান্তি চৌধুরীর মতে, বইটি ‘এক সার্বিক অভিভাবাসী অভিজ্ঞতার প্রতিধ্বনি’। তার মতে- ‘বইয়ের নানা অধ্যায়ে উঠে এসেছে বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণের মনস্তাত্ত্বিক টানাপেড়েন, কর্মস্থলে জাতিগত পরিচয় সংকট, সন্তানদের নিয়ে ভবিষ্যতের দোলাচল, কিংবা আত্মীয়স্বজনহীন একাকিত্বের দীর্ঘশ্বাস- যা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এক সার্বিক অভিভাসী অভিজ্ঞতার প্রতিধ্বনি। তবে এসবের মাঝেও বিষেদগার হয়ে ওঠেনি। বরং লেখরেকর ভাষা-নিরীক্ষা, অন্তর্দৃষ্টি ও স্বভাবসিদ্ধ রসবোধে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পাঠ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে’।

বুধবার সন্ধ্যায় ‘উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে লেখক-পাঠকদের রীতিমত মিলনমেলা ঘটে। এ অনুষ্ঠানে বইটির লেখক, উত্তর আমেরিকা ভিত্তিক ‘দেশে বিদেশে’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নজরুল মিন্টোও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘উত্তর আমেরিকার চালচিত্র’ নিয়ে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমীন এবং রবীন্দ্রগবেষক মিহিরকান্তি চৌধুরী।

কবি ও গবেষক অপূর্ব শর্মার সঞ্চালনায় প্রকশনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক, শিক্ষাবিদ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, কবি কালাম আজাদ, ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ভাস্কর রঞ্জন দাশ।

অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ভাস্কর রঞ্জন দাশ বলেন, নজরুল মিন্টো তরুণ বয়স থেকেই লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত। আশির দশকেই তার উদ্যোগে ফেঞ্চুগঞ্জে প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়। প্রবাসের কর্মব্যস্ত জীবনেও তিনি তার লেখালেখি ও সংস্কৃতিসেবা অব্যাহত রেখেছেন।

কবি কালাম আজাদ বলেন, একজন বলেছিলেন- ‘মুর্খের কোন স্বদেশ নেই, আর জ্ঞানীর কোন বিদেশ নেই’। আমাদের গুরুতুল্য কবি দিলওয়ারও লিখেছিলেন- পৃথিবী স্বদেশ যার আমি তার সঙ্গী চিরদিন’। কবি নজরুল মিন্টো’র এই বইটি পড়ে আবারও এসব উক্তি মনে পড়লো। যে জ্ঞানী সে সবদেশকেই আপন করে নিতে পারে। সবখানেই তার জ্ঞানের চিহ্ন রাখতে পারে। এই বইয়েই তার সাক্ষ্য রয়েছে।

অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, নজরুল মিন্টো’র লেখার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা রয়েছে। তার চিন্তার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা রয়েছে। এই মুন্সিয়ানা দিয়েই তিনি সমাজকে বিশ্লেষন করেছেন তার ‘উত্তর আমেরিকা চালচিত্র’ বইয়ে। এছাড়া সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়, দরিদ্র শিশু, অভিভাসী, বাংলাদেশের যুদ্ধশিশুদের প্রতি যে দরদ বিভিন্ন লেখায় ফুটে ওঠেছে এরতে তার মানবিক ও সংবেদনশীল হৃদরেয়রও সন্ধান পাওয়া যায়। এই বইটি পড়েই জানতে পারলাম একাত্তরে নির্যাতিত নারীদের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুদের পরিচয়ের ক্ষেত্রে ‘যুদ্ধশিশু’ শব্দটি বাংলায় তিনিই প্রথম ব্যবহার করেছেন। যা নিসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

অনুষ্ঠানে সবশেষে বক্তব্য রাখেন বইয়ের লেখক নজরুল মিন্টো। তিনি উপস্থিত সকলেল প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো পাশপাশি তার লেখালেখি ও সাংবাদিকজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এসময় উপস্থিত পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন লেখক।

২৫৬ পৃষ্টার বইটিতে নানা বিচিত্র ও বৈচিত্রপূর্ণ বিষয়ে ৬৬ টি প্রবন্ধ রয়েছে। যেগুলো উঠে এসেছে উত্তর আমেরিকা তথা কানাডা ও আমেরিকার ইতিহাস, সেখানকার জীবন, জীবিকা, প্রকৃতি ও সংস্কৃতি, কানাডার অভিবাসীদের সুখ-দুঃখ, আশা ও হতাশার গল্প, প্রবাসে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বয়ান। সুখপাঠ্য বইটি ঘন্টা তিনেকেই পাড়ে নেওয়া যায়। এযেনো ঘন্টা তিনেইে উত্তর আমেরিকা ভ্রমণ করে ফেলার অনুভুতি।

বইটি প্রকাশ করেছে অভ্র প্রকাশন। বৃহস্পতিবার প্রকশনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসিনা বেগম চৌধুরী, কবি পুলিন রায়, ছড়াকার বিধু ভ’ষণ ভট্টাচার্য, প্রবীন সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন ইসকা, দি ডেইলি প্রেজেন্ট টাইম এর সিলেট ব্যাুরোচীফ সাংবাদিক এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া, লেখক হাবিব আহমদ দত্ত চৌধুরী, কবি ধ্রব গৌতম, কাশমির রেজা, সিরাজ উদ্দিন শিরুল, মাসুদা সিদ্দিকা রুহী, রওশন আরা বাসি ফটোগ্রাফার এমরান ফয়সাল প্রমুখ

আরও পড়ুন


Discover more from সমবানী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

আর্কাইভ
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন

Discover more from সমবানী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading