ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্রাষ্টের ভুমি দখল
প্রতিনিধিঃ
মনজু বিজয় চৌধুরী, মৌলভীবাজার

সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনড ট্রাষ্টের ভূমি লীজের বিধিমালা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনৈতকভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্রাষ্টের ভুমি দখল করে একের পর এক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দোকান কোঠা গড়ে তুলার অভিযোগ উঠেছে মৌলভীবাজার খ্রীষ্টান মিশনের ভূমি লীজ নেওয়া হারবি হেডেন প্রেন্টিস (অপু) বিরুদ্ধে। আবাসিকভাবে ব্যবহারের জন্য পাওয়া লীজের ভূমি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য ট্রাষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন লিখিত অনুমোদন নেননি তিনি, অভিযোগ রয়েছে পাহাড়ি টিলা কেটে সমতল করে নির্মাণ করা হয়েছে এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক চিঠির মাধ্যমে তাকে এই নোটিশ দেয় ট্রাষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নোটিশে বলা হয়, ১৯৯৮খ্রি: কতেক শর্ত সাপেক্ষে শুধুমাত্র সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনডের সদস্যদের মধ্যে পাঁচ শতক করে তুমি বরাদ্দের সিদ্ধান্তে টাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ সদস্য গণের নিকট থেকে দরখাস্ত আহবান করেন। সে মতে আপনি বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত শর্ত মোতাবেক পাঁচ শতক ভূমি লীজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। আপনার আবেদনের ভিওিতে শুধুমাত্র আবাসিকভাবে ভোগ ব্যবহারের জন্য আপনাকে ভূমি লীজ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রাথমিক চুক্তি সম্পাদনের পর বোর্ড অব ট্রাষ্টির কোন লিখিত অনুমতি ছাড়া আপনি আপনার জন্য বরাদ্দকৃত প্লটে গৃহ নির্মাণ না করে।
উল্টো তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পার্শ্ববর্তী প্লটের বেশ কিছু জায়গা দখল করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দোকান কোঠা নির্মাণ করেন। যা আপনার সাথে সম্পাদিত চুক্তির পরিপন্থী-বেআইনী ও ট্রাষ্টের বিধিমালা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায় আপনাকে দেয়া ট্রাষ্টের ভূমির প্লটের চুক্তি বাতিল করে আপনার বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা পত্র পাওয়ার মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হল,অন্যথায় ট্রাষ্টের ক্ষমতাবলে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে পাহাড়ি টিলা কেটে সমতল করে এখানে গড়ে উঠেছে বিল্ডিংসহ বাণিজ্যিক স্থাপনা। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন শহরের মধ্যে এভাবে পাহাড় কাটার সময় দায়িত্বহীনতা দেখিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফলে এই পাহাড়ের বেশির ভাগ টিলা এরিই মধ্যে সমতল ভূমিতে রূপ নিয়েছে।
ট্রাষ্ট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশন ৩৩৯০ অফ ২০২২ এর দেয়া রায় অনুযায়ী ট্রাষ্টের বর্তমান কমিটি বৈধভাবে সরকারি বিধিমালা অনুযায়ি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে,ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পাড়েনি ট্রাষ্ট, সেই প্রভাব তিনি এখনো খাটিয়ে জাচ্ছেন, তাই ট্রাষ্ট বাধ্য হয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, সে অনুযায়ি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী জানা যায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটা বা মোচন করতে পারবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে, প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে, পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হারবি হেডেন প্রেন্টিস (অপু) বলেন, বর্তমান ট্রাষ্টই অবৈধ, কারণ দর্শানোর কোন নোটিশ তিনি পাননি। ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে, তিনি বলেন, মিশনের ভিতরে সবাই ঘরভাড়া দিচ্ছে,রিসোর্ট করেছে,আর আমি আন্ডার গ্রাউনে দোকান কোঠা করা দোষের হয়ে গেল,আমিতো আর ট্রাষ্টের জায়গা বিক্রি করছিনা,সবাই দিয়েছে তাই আমিও দিয়েছি। গাইড ওয়াল করতে গিয়ে পাহাড়ি টিলা কেটে সমতল করার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন এজন্য জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পৌরসভার পারমিশন নিয়েছেন। তবে এ সংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র দেখাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
পাহাড়ি টিলা কেটে গাইড ওয়াল নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো মাঈদুল ইসলাম উওেজিত হয়ে, ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি, বলেন উপরের মহলের নির্দেশনা ছাড়া তিনি কোনো কথার জবাব দেবেননা, বক্তব্য দেবেন না, যা মন চায়, তাই করতে বলে উল্টো সাংবাদিকদের বলেন এ বিষয়ে আপনারা অভিযোগ দিয়ে যান।
আরও পড়ুন
- বোরহানউদ্দিনে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশ
- ভোলায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৫ কারবারি আটক
- বোরহানউদ্দিনে খাবারে নেশা খাওয়াইয়া অচেতন করে ২ লক্ষ টাকা চুরি অসুস্থ্য ৫ জন
Discover more from সমবানী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.