সিলেটে পুলিশের গুলিতে তুরাব হত্যা ছেলের শোকে শহর ছাড়ছেন মা!
প্রতিনিধিঃ
হাবিবা আক্তার, (দক্ষিণ সুরমা) সিলেট

এ যেন মায়ের হৃদয় বিদারক উক্তি। পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাব এ মা বলেন,
‘আমার সুবিধার লাগি আমরা টাউনো আইছলাম, এখন আমার পুয়া আর নাই, আমরা আর টাউনো( শহরে) থাকতাম নায়,।
অউমাসো ( চলতি মাসে )
আমার নাতিনর পরিক্ষা শেষ ওইলে ( হলে)আমরা বাড়িত যাইমুগি'( বাড়িতে চলে যাব ) ।
চোখের পানি মুছে মুছে কান্না জড়িত কন্ঠে অশ্রু ভেজা চোখে কথাগুলো বলেন। ছাত্রজনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে সিলেটে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের বৃদ্ধা মা মমতাজ বেগম।
শুক্রবার সিলেট জেলা মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ তাকে দেখতে গেলে তিনি এমন সব উক্তি করেন তিনি।
মহিলা দলের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলার সময় তিনি বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সূচনা হয়।কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ ও।
এতে অনুভব করা যায় ছেলে হারা মায়ের বেদনা যে কত বেদনাদায়ক। এসময় সিলেট জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক তাহসিন শারমিন তামান্না, সহ সভাপতি ফেরদৌসী ইকবাল, জেলা বিএনপির সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা মহিলা দলের দপ্তর সম্পাদক সুলতানা রহমান দিনা তাকে শান্তনা দেন।
এসময় সিলেট জেলা মহিলা দলের সভাপতি তাহসিন শারমিন তামান্না বলেন, তুরাবের লাশ তো স্বজনরা দেখেছেন, তার কবর জিয়ারত করতে পারছেন। কিন্তু আমার ভাই দিনার কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন? আমরা তার কিছুই জানি না। এই জাতি ত্রিশ লক্ষ জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে, সময়ের প্রয়োজনে বার বার রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সকল গুম ও খুনের বিচার করা হবে।
এসময় জেলা বিএনপির সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা মহিলা দলের দপ্তর সম্পাদক সুলতানা রহমান দিনা বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীদের গুম ও খুন করা হয়েছে। বিচারের নামে জুডিশিয়ালী কিলিং হয়েছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে হাজার হাজার প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছে। ইতিহাস কখনো কাউকে ক্ষমা করেনি।
দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি ও দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এটিএম তুরাব সিলেট শহরে তার বোনের বাসায় থেকে সাংবাদিকতা করতেন।
গত বছর তিনের আগে তার বোন অ্যামেরিকায় চলে গেলে ছেলের কষ্টের কথা বিবেচায় পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার থেকে সিলেট শহরে আসেন তুরাবের মা।
এখন আর ছেলেও নেই, তাই সিলেট শহরে থাকার প্রয়োজনীয়তাও নেই। তাই চলতি মাসে তুরাবের ভাইজির পরিক্ষা শেষ হলেই গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজারে চলে যাবেন তারা। যে শহরে নিজের ছেলের স্বাচ্ছন্দের জন্য এসেছিলেন, সেই শহর থেকেই ফিরে যাচ্ছেন ছেলেকে ছাড়া।
শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মোহাম্মদ আজরফ (জাবুর আহমদ) বলেন, মামলার এতদিন পরও পিবিআইর তন্তের কোন অগ্রগতি নেই,
তিনি বলেন, পুলিশের যে কর্মকতা আমার ভাইয়ের বুকে গুলি করেছিল, সে সহ তার সহযোগীরা এখনো চাকুরীতে বহাল থেকে মামলার তদন্ত প্রভাবিত করছে। অভিলম্বে তাদেরকে চাকুরিচ্যুৎ করে গ্রেফতার করা হউক।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা মহিলা দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নুরুন নাহার ইয়াসমিন, মহিলা দল নেত্রী জান্নাত জামান চৌধুরী, বিলকিস আক্তার, জুলি পুরকায়স্থ, আমিনা বেগম, মিনা বেগম, রাবিয়া বেগম, রায়না বেগম প্রমূখ।
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার এলাকার কালেক্টরেট জামে মসজিদ এলাকায় বিএনপি ও পুলিশের সংর্ঘষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক তুরাব। হত্যাকান্ডের পাঁচ দিন পর তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ৮-১০ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায়। তবে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি তৎক্ষালিন কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
পুলিশ ওই সময় জানায়- আগেই তাদের পক্ষ থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকশকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে তুরাব হত্যাকান্ডের ঘটনায়। তাই তুরাবের ভাইয়ের দায়ের করা অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করেছে তারা। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, পুলিশের এজাহারে গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ ছিল না ।
উল্লেখ্য, তুরাব হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা এখন সময়ের দাবি ।
আরও পড়ুন
- বোরহানউদ্দিনে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশ
- ভোলায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৫ কারবারি আটক
- বোরহানউদ্দিনে খাবারে নেশা খাওয়াইয়া অচেতন করে ২ লক্ষ টাকা চুরি অসুস্থ্য ৫ জন
Discover more from সমবানী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.