ভাণ্ডারিয়া হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জুরুরী সভা অনুষ্ঠিত হাসপাতালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি! জনবল সংকট চরমে
প্রতিনিধিঃ
ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এক সময় এলাকার মানুষের জন্য ছিল আশার আলো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালটি চরম জনবল সংকটে ভুগছে।যার প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা কার্যক্রমের সবখানে। এছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই ৪-৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। শুধু ডেঙ্গু রোগীই নয়, ডায়েরিয়া, জ্বর, শর্দি,কাশি, মারামারিসহ রোগীও সেবা নিতে আসে। প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
এই সমস্য লাঘবের জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার হাসপাতাল ব্যবস্থ্যাপনা বিষয়ক এক জরুরী সভার আয়োজন করেন। হাসপাতাল সভাকক্ষে এ জরুরী সভায় পৌর প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভাপতি রেহেনা আক্তারের সভাপতিত্বে সেবা নিতে আসা রোগীদের নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য সেবা দিতে নানা সমস্যা তুলে ধরেন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বর্ণালী দেবনাথ। বক্তব্য রাখেন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ কামাল হোসেন এবং মেডিকেল অফিসার ডাঃ অমিত হাসান প্রমুখ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ভাণ্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৮১ সালে নির্মিত হয়। ৩১ শয্যার এই হাসপাতালটি ২০১১ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষনা দেন।
কিন্তু ভবন সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হলেও আসবাবপত্র ছাড়া কিছুই বরাদ্দ হয়নি। বর্তমানে ১০০ শয্যা তো দুরের কথা, ৩১ শয্যার সুযোগ সুবিধাও এ হাসাপতালে নেই। এদিকে ৫০সয্যায় উন্নিত হওয়ার পর প্রথম শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ২৮জন হলেও বর্তমানে মেডিকেল অফিসার-০৪ জন, আরএমও-০১জন,কনসালটেন্ট-০২জন,ইউএইচএফপি-০১ জনসহ মোট ১২জন কর্মরত আছে। এবং ১৬টি পদ শূণ্য। ঐ ১২ জনের মধ্যে আবার ০৪ জন প্রেষণে অন্যত্র।
দ্বিতীয় শ্রেণির ২৯টি পদের মধ্যে ২৭ জন থাকলেও ২ জন বিএসসি কোর্সে অধ্যয়নরত। তৃতীয় শ্রেণির ৮১টি পদের মধ্যে ৩২টি পদই শূণ্য। এছাড়া ৪র্থ শ্রেণি ২৮টি পদের মধ্যে ২২টি শূণ্য,৬টি থাকলেও তার মধ্যে ১জন প্রেষণে অন্যত্র। সিএইচসিপি ২৪টি পদে ১টি শূণ্য থাকলেও তাতে খুব বেশি অসুবিধা হয়না। এক জন জুনিয়ার কনসালটেন্ট(এনেস্থেশিওলজী)পদটি অতি সম্প্রতি শূণ্য হইবে। তা হইলে সিজারিয়ান সেকশন বন্ধ হইবার সম্মুখীন হবে।
অন্যদিকে দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় আগত রোগীদের সেবা দান ব্যহত হচ্ছে। সেখানে নতুন ভবন নির্মান জরুরী। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্ধারিত বাসভবন নাই, ডাক্তার, নার্স এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য কোন ডরমেটরি নাই। প্রশাসনিক শাখায় কোন ওয়াশ রুম না থাকায় কর্মচারীগণ রোগীদের ওয়ার্ডের ওয়াশরুম ব্যবহার করে থাকেন। হাসপাতালের ২য় এবং ৪র্থ তলায় কেসিগেট না থাকায় উপজেলা পর্যায়ের ১০ সয্যা বিশিষ্ট আইসিউ (অক্সিজেন প্লান্ট)’র তামার পাইপসহ মূল্যবান মালামাল চুরি হয়। সেবা প্রদানে আউটসোর্সিং একর্মরত ১১জন স্টাফকে প্রায় এক বছর পর্যন্ত কোন বেতন প্রদান করা যায়নি। তবুও তারা মানবিক বিবেচনায় সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
মেডিকেল অফিসার অমিত হাসান জনান, একজন চিকিৎসক ও একজন ওয়ার্ডবয় দিয়ে রাতভর রোগীর সেবা চালানো অত্যন্ত কষ্টকর। অনেক সময় দুর্ঘটনা বা গুরুতর রোগী এলে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় রোগীকে রেফার করে দিতে হয়। এতে করে অনেক সময় জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়ে।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স কুচিয়া বেগম জানান, “রাতের ডিউটিতে মাত্র ২-৩ জন নার্স থাকি। পুরো হাসপাতালে এত রোগী সামলানো অসম্ভব। সবাই চেষ্টা করি, কিন্তু বাস্তবতা খুব কঠিন।”
যন্ত্রপাতির সংকটও জনবল সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করেছে। ল্যাব টেকনিশিয়ান ২ জন থাকার কথা থাকলে রয়েছে একজন। এই একজন দিয়ে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা কোন রকম চালিয়ে নিচ্ছে। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবাল না থকেলেও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। রোগী বহনের জন্য চরটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইবার রয়েছে ১ জন। তাও অ্যাম্বুলেন্সের তৈলের বরাদ্ধ অপ্রতুল হওয়ায় এবং প্রায়ই বিকল থাকায় রোগীদের প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন করতে হয়।
আশ্চর্যজনকভাবে, এত বড় একটি হাসপাতালে নেই কোনো স্থায়ী স্টোর রুম। ফলে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অন্যান্য মালামাল সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না, যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে হাসপাতালের সেবাদান কার্যক্রমে। স্বাভাবিকভাবেই মাসে মাসে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ, গজ, স্যালাইন, ইনজেকশন, টিকাদান সরঞ্জাম এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এসব সামগ্রী দীর্ঘ সময় ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য একটি স্থায়ী ও নিরাপদ স্টোর রুম না থাকায় বর্তমানে হাসপাতালের কয়েকেটি রুমকে অস্থায়ীভাবে স্টোর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় ওষুধ ও মালামাল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট উজ্জল জানান, “স্টোর রুমে জায়গা কম হওয়ায় সব কিছু গুছিয়ে রাখা যায় না। অনেকসময় ইনভেন্টরি মেইনটেইন করতেও সমস্যা হয়। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয় কোন ওষুধ আছে, কোনটা নেই, তা বুঝতে দেরি হয়।”
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্ধারিত আর্থিক বরাদ্দ না পাওয়ায় হাসপাতালটির উপর চেপে বসেছে কোটি টাকার দেনা। যার মধ্যে রয়েছে ভূমি উন্নয়ন কর, পৌরকর এবং বিদ্যুতের বকেয়া বিল যা দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নামে মোট বকেয়া রয়েছে প্রায় ৭৪ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে পৌরকর ৫৬ লক্ষ টাকা, বিদ্যুৎ ১৭ লক্ষ টাকা এবং ভূমি উন্নয়ন কর ৬৬ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ বকেয়ার কারণে হাসপাতালের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্মও ব্যাহত হচ্ছে।
কেবিনের ভাড়া আদায়ে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। নার্সগণ ভাড়া আদায় করতে গেলে রোগীর স্বজনরা ভাড়া দেয়ার পরিবর্তে স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারসহ অসৌজন্যমুলক আচরণ করে থাকেন। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি জনমনে এক বিভ্রন্তি তৈরি হয়।
এ বিষয়ে প্রশাসনিক ভাবে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জরুরী সভার সিদ্ধান্তসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে বলেও সভায় জানানো হয়।
আরও পড়ুন
- বোরহানউদ্দিনে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশ
- ভোলায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৫ কারবারি আটক
- বোরহানউদ্দিনে খাবারে নেশা খাওয়াইয়া অচেতন করে ২ লক্ষ টাকা চুরি অসুস্থ্য ৫ জন
শেয়ার:
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on Reddit (Opens in new window) Reddit
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on Tumblr (Opens in new window) Tumblr
- Click to share on Pinterest (Opens in new window) Pinterest
- Click to share on Pocket (Opens in new window) Pocket
- Click to share on Threads (Opens in new window) Threads
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
Discover more from সমবানী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
