কোরবানীর ঈদ কে টার্গেট করে সুনামগঞ্জ সীমান্তে গরু চোরাকারবারীরা সক্রিয়।
প্রতিনিধিঃ
লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা কোরবানীর ঈদ কে টার্গেট করে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্তে গরু চোরাকারবারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে শত শত গরু, মহিষ, ছাগল ভারত থেকে অবৈধ ভাবে আসছে।
পরে সীমান্তের পশুর হাটে এনে বৈধতা দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সড়ক পথে ও নৌ পথে পাঠানো হয়। সীমান্ত রক্ষা বাহিনী সহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের হাতে কিছু আটক হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কিছু অসাধু বিজিবি, পুলিশ, সংবাদ কর্মীদের ম্যানেজ করেই এসব কর্মকান্ড দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে চোরাকারবারীদের অপতৎপরতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে এসব অবৈধ কাজ কারবার ওপেন সিক্রেট হলেও দেশের পট পরিবর্তন ও বর্তমান বিজিবির অধিনায়কের শক্ত ভূমিকার জন্য অনেকটাই কমে আসছে। কিন্ত থেমে নেই চোরাচালান। শুধু পশু নয়,আরও অনেক পণ্য আসছে।
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্তে দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রতিদিনই শত শত গরু ও মহিষ,ছাগল , থান কাপড়, কসমেটিক, বিভিন্ন ধরনের মাদক সহ ভারতীয় বিভিন্ন চোরাইপণ্য আসছে। এই সীমান্ত এলাকা এখন চোরাকাবারিদের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে আসা এসব অবৈধ গরু ও মহিষের বৈধতা দিচ্ছে উপজেলার এক মাত্র পশুর হাট মহিষখলা বাজারের ইজারদার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সীমান্তে চোরাকারবারিরা প্রতিদিন প্রতিযোগীতামূলক ভাবে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশে আনছে গরু—মহিষ। মহিষখলা বাজারের ইজারদারের নিকট থেকে গরু প্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা ও প্রতিটি মহিষের জন্য দুই হাজার টাকা দিয়ে গবাদিপশু ক্রয় বিক্রয়ের হাসিল রশিদ সংগ্রহ করলেই এসব গরু মহিষ বৈধতা পায়।
আর এই হাসিল রশিদের বলেই ভারতীয় গরু—মহিষ বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমের পাঠিয়ে দেয়া হয় পাশের বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে অনুমোদন বিহীন গবাদিপশুর হাট দাতিয়াপাড়া নতুন বাজার ও ধর্মপাশা বাজার, বারহাট্টা উপজেলার নৈহাটী বাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সাদ্দাম নামক এক ল্যাইনম্যান পুলিশের নামে চোরা কারবারিদের থেকে টাকা তোলে লাইন ক্লিয়ার করে দেয় এমন অভিযোগ ও রয়েছে। বিজিবির কিছু অসাধু সদস্যদের ও এভাবেই ম্যানেজ করা হয়।
মধ্যনগরের আশিক মিয়া বলেন, বর্তমানে চোরাইপথে ব্যাপক হারে ভারতীয় গরু আনা হচ্ছে। অনেকেই চোরাকারবারীদের সাথে জড়িত আছে। অবৈধ এসব ভারতীয় পশু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদশে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মহিষখলা বাজারের গরু হাটের হাসিল রশিদ পেয়ে যান চোরাকারবারি সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসনের হাটবাজার ব্যাবস্থাপনা কমিটি টেন্ডারের মাধ্যমে মহিষখলা বাজারটি ১৪৩২ বাংলা ১বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত একসনা ইজারা প্রদান করেছে। দরদাতা হিসেবে চামরদানী ইউনিয়নের দুগনুই গ্রামের বাসিন্দা এম এ শহীদ মহিষখলা বাজারটি ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় ইজারা পান।
অভিযোগ রয়েছে মহিষখলা বাজারের গবাদিপশুর হাটকে কেন্দ্র করেই মূলত চোরাকারবারি চক্রটি সক্রিয় রয়েছে। গরু ও মহিষ চোরাকারবারের সাথে মহিষখলা বাজার ইজারাদাররা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। এরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী তাই এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
এ বিষয়ে মহিষখলা বাজারের ইজারাদার চামরদানী ইউনিয়নের দুগনুই গ্রামের বাসিন্দা এম এ শহীদ বলেন, আমি কিছুদিন হয় ইজারা নিয়েছি, এসব অবৈধ কাজ কারবার হয় না ।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে মধ্যনগর থানার ওসি সজীব রহমান বলেন থানা থেকে সীমান্ত এলাকার অবস্থান অন্তত ২৫ কিলোমিটার। এছাড়াও দুর্গম এলাকা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা খুব মুশকিল।
অন্য দিকে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকার গরু চোরাকারবারীরা ও বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের মেঘালয়ের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দোয়ারাবাজার মৌলার পাড় সহ বিভিন্ন স্থান দিয়ে গরু,ছাগল, মহিষ আসছে।
সীমান্তের ঠিক পাশেই বোগলা বাজার পশুর হাট এখানে এনে অবৈধ কে বৈধতা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন গভীর রাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে চোরাকারবারীদের তৎপরতা। এই বাজার টি প্রতি বছরই প্রচুর টাকা দিয়ে ইজারা নিয়ে থাকেন। এবারও অনেক টাকায় ইজারা পান ফয়সাল জামান । গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হন ।
ফয়সাল জামান বোগলা বাজারের বাসিন্দা এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুনামগঞ্জ জেলার যুগ্ম আহবায়ক। তার সাথে আছেন সিলেট বিভাগের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সালেহ নাসিম। গত ২৯ মার্চ এই পশুর হাট ইজারা নিয়ে প্রতিপক্ষ ফয়সাল জামান ও আবু সালেহ নাসিম কে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। এ নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে এই হাটের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অন্তত ৭০/৮০ জন অংশীদার রয়েছেন। গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জ শহরের সাহেব বাড়ি ঘাটস্হ সুরমা নদীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে একটি ইঞ্জিন চালিত স্টিল বডি নৌকা বোঝাই গরু আটক করে। আটককৃত ৯০ টি গরুর আনুমানিক বাজার মূল্য পৌণে এক কোটি টাকা। অবৈধ ভাবে সীমান্তের ওপার থেকে এনে বোগলা বাজারের রশিদের বৈধতা দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর সময় আটক করা হয় এমনটা জানিয়েছে বিজিবি।
পরে গরু গুলো জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয়দের জিম্মায় আদালতে নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। গত ২ মে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলারব বাংলাবাজার জুমগাও থেকে বিজিবি ৫ টি গরু আটক করে। একই দিন তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তে ২ টি গরু আটক করা হয়।
২৭ এপ্রিল দোয়ারাবাজার পেকপাড়া সীমান্তে ৪ টি, দক্ষিণ কলোনি থেকে ৭ টি গরু আটক হয়। ১৬ এপ্রিল মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা কড়াইবাড়ি হতে ৫ টি গরু ,১৪ ও ১৫ এপ্রিল দুই দিনে মধ্যনগর উপজেলার মাটিরাবন ও বাঙ্গাল ভিটা হতে ৯ টি গরু ,বাঙ্গাল ভিটা বাশতলা হতে ৪টি গরু ঐদিনই দোয়ারাবাজার উপজেলার পেকপাড়ায় ৫ টি ৫ এপ্রিল দোয়ারাবাজার উপজেলার জুমগাও থেকে ৩ টি ,মোকামছড়া থেকে ৩ টি, ৪ এপ্রিল মোকামছড়া হতে ৯ টি, ২ এপ্রিল দোয়ারাবাজার উপজেলার জুমগাও থেকে ৪টি এবং মোকামছড়া হতে ৩ টি গরু বিজিবির সদস্যরা আটক করেন। জানা যায়।
গত তিন মাসে অন্তত ৫ শ গরু শুধু বিজিবির হাতেই আটক হয়েছে। সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির জানান, ঈদ কে সামনে রেখে আমাদের টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে চোরাইপণ্য ও চোরাচালানে জড়িতদের গ্রেফতার করছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন
- বোরহানউদ্দিনে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশ
- ভোলায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৫ কারবারি আটক
- বোরহানউদ্দিনে খাবারে নেশা খাওয়াইয়া অচেতন করে ২ লক্ষ টাকা চুরি অসুস্থ্য ৫ জন
Discover more from সমবানী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.