রবিবার, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিড়িয়াখানায় একদিন

০ টি মন্তব্য 24 ভিউ 14 মিনিট পড়ুন
অ+অ-
রিসেট করুন

প্রতিনিধিঃ

print news | চিড়িয়াখানায় একদিন | সমবানী

গত বছর আমি প্রথম বারের মতো ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানায় যাওয়ার সুযোগ পাই। তখন ছিল জুলাই মাস। আমেরিকা থেকে আগত আমার মামাতো ভাইদের উপলক্ষেই বলতে গেলে চিড়িয়াখানা দেখার সুযোগ হয়েছিল। একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে আমরা চিড়িয়াখানায় যাব। যাত্রার সময় ঠিক হলো সকাল ১০টা। ঠিক সময়ে গাড়ি এসে গেল। প্রায় সোয়া ১১টায় আমরা চিড়িয়াখানায় পৌঁছলাম। আমরা মোট আটজন আমি, সাদি, আবীর, মামাতো ভাই ইউসুফ ও ইমরান ভাইয়া, খালাতো ভাই প্রিন্স, জিম ও আদল এবং আমার মামা। টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হলো। ঢোকার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম যে জায়গাটা বিশাল।

শুরুর খাঁচাটি বানরের। বানরের বাঁদরামি দেখতে ছোট শিশুরা তাদের বাবা-মাসহ সেখানে ভিড় জমিয়েছে। খাঁচার বিপরীতেই বিশাল লেক। মামা বললেন, শীতকালে এখানে প্রচুর অতিথি পাখি আসে। মনে হলো, শীতকালে এলেই বুঝি ভালো হতো। বানরের পরের খাঁচাটি হনুমানের । তার পরেরটি শিম্পাঞ্জির। বানরের চেয়ে তারাও কোনো অংশে কম নয়। এরপরই দেখা গেল রঙিনমুখে বেবুনকে । বানর প্রজাতির পরই রয়েছে বিড়াল প্রজাতি। এখানে ছোট জাতের বনবিড়াল, মেছোবাঘ ও এরপর চিতাবাঘ দেখলাম। চিতাবাঘ যে খুব দ্রুত গতির প্রাণী, খাঁচায় আবদ্ধ চিতাবাঘকে দেখে তা বোঝা গেল না। এর পরে পাশাপাশি দুটি খাঁচায় সিংহ আর বাঘ। উভয়ের ভঙ্গিই রাজকীয়। তবে খাঁচায় বন্দি পশুরাজ সিংহকে ‘পশুরাজ’ মনে হয়নি। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ আমরা অপেক্ষা করলাম বাঘ-সিংহের গর্জন শোনার জন্য। কিন্তু হতাশ হতে হলো ।

আমরা এগিয়ে গেলাম। বেশ বড় একটা খাঁচায় উটপাখি রাখা হয়েছে। পুরুষ উটপাখিগুলো দেখতে সুন্দর ও রাজকীয়। কিন্তু স্ত্রী উটপাখিগুলো যেন পালক ওঠানো বিশালাকার মুরগি। উটপাখির পাশেই অস্ট্রেলিয়ার এমু পাখির খাঁচা। আকারে এরাও বিশাল। এরপর কিছু দূরেই হরিণের খাঁচা। বড় খোলা ঘেরাও দেওয়া মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছে সুন্দর চিত্রা হরিণ। আলাদা আলাদা খাঁচায় রয়েছে অন্য জাতের হরিণগুলো। বড় শম্বর হরিণের খাঁচার পাশেই ভিড় বেশি। দুর্লভ কৃষ্ণমৃগও দেখলাম সেখানে। হরিণের খাঁচার পাশেই রয়েছে ঘোড়া। সাদি ও আদল ভয়ে ভয়ে ঘোড়া পিঠে চড়ল।

এরপর আমরা চিড়িয়াখানার জাদুঘরে গেলাম। সেখানে বিভিন্ন প্রাণীর ছাল-চামড়া সংরক্ষণ করে রাখা রয়েছে। এমনকি কিছু প্রাণী মমি করেও রাখা রয়েছে । তবে সবচেয়ে মুগ্ধ হলাম বিশাল এক তিমির ফসিল দেখে । জাদুঘর থেকে বেরিয়েই সরীসৃপদের ঘর। কাচের খাঁচায় রাখা হয়েছে সরীসৃপদের। অজগর, গোখরা, শঙ্খচূড়, ঢোঁড়া সাপ, পদ্মগোখরা, কেউটে প্রভৃতি সাপ দেখলাম। তবে সবচেয়ে অদ্ভুত ও সুন্দর লাগল লাউডগা সাপ দেখে । লাউ গাছের সাথে একাত্ম হয়েছিল সবুজ রঙা এ সাপটি। সাপ ছাড়াও সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুঁইসাপ ও গিরগিটি। এছাড়াও দেখলাম কাছিম। ডাঙায় চড়া কচ্ছপগুলো বড়ই বেঢপ দেখতে। আর সামুদ্রিক বা শুধু পানির কাছিমগুলো বেশ বড় ও সুন্দর ।

এদের দেখে বেরিয়ে আসতেই পড়লাম কুমিরের খাঁচার সামনে। কুমিরের খাঁচার পাশেই জলহস্তীর খাঁচা। বিশাল কর্দমাক্ত প্রাণীগুলোকে দেখে মনেই হলো না যে এদের নামকরণের সাথে হাতির কোনো রূপ সম্পর্ক রয়েছে। এদের বিশাল মুখগহ্বর এবং ছোট কান দেখে হাতির সাথে কোনো সাদৃশ্য খুঁজে পেলাম না। জলহস্তীর পাশেই গণ্ডারের খাঁচা। গণ্ডারকে দেখে মনে হলো সত্যিকারের যুদ্ধরাজ প্রাণীর মতো। গণ্ডারের চামড়া অনুভূতিশূন্য বলে একটা ধারণা ছিল। কিন্তু এখানে এসে তা ভুল প্রমাণিত হলো। বরং দেখা গেল, গণ্ডারের চামড়া বেশ স্পর্শকাতর। এরপর দেখলাম নীল গাই। আকারের বিশালত্ব ছাড়া দেশি মোষের সাথে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। চিড়িয়াখানায় আমার কাছে সবচেয়ে মজাদার প্রাণী হলো ভুটানি গরুকে । মাত্র প্রায় দুই ফুট উঁচু এই গরুটিকেই মনো হলো সবচেয়ে সুন্দর ও অদ্ভুত।

আমি ও সাদি দূরে গিয়ে হায়েনা ও ভাল্লুক দেখে এলাম। বইতে হায়েনার হাসির কথা পড়েছি। কিন্তু হায়েনার হাসি শুনতে না পেয়ে একটু আফসোস হলো। ফিরে এসে দেখি মামারা হাতি দেখে ফেলেছেন। আদল, জিম, প্রিন্স হাতির পিঠেও চড়েছে। হাতি নাকি তাদের সেলাম দিয়ে বখশিশও নিয়েছে।

খিদে পেয়েছিল। একটা গাছের তলায় আমরা সবাই গোল হয়ে বসলাম। সঙ্গে আনা পাউরুটি, মাংস, হালুমা শেষ করলাম। আবার সবাই একসাথে এগিয়ে চললাম এবং গেলাম পাখিদের আস্তানায় ।

রং-বেরঙের নানা পাখির কলরবে পাখির খাঁচাগুলো মুখরিত। বড় ঈগল, হাড়গিলা, হাঁড়িচাচা প্রভৃতি পাখি দেখতে পেলাম, আরো দেখলাম টিয়া, ময়না, কাকাতুয়া, আর বিভিন্ন প্রজাতির পেয়ারা ও বক। এরপরই দেখলাম আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্মরণীয় দৃশ্যটি। কোনোরকম বৃষ্টি ছাড়াই একটি ময়ূর পেখম খুলে নাচতে শুরু করেছে। মুহূর্তের মাঝেই খাঁচার সামনে লোকজনের ভিড় জমে গেল । সন্ধ্যা হয়ে আসছিল দেখে আমরা ফিরে চললাম। ফেরার পথে নতুন প্রাণীর মধ্যে দেখলাম গাধা, খরগোশ, গিনিপিগ ও সজারু এ ছাড়াও দেখলাম উল্লুক ও ভোঁদড়।

এরপর প্রায় ছটার সময় আমরা বের হয়ে এলাম। মাইক্রোবাসে ক্লান্তশ্রান্ত শরীর এলিয়ে বাসায় ফিরলাম। এতদিন যেসব প্রাণীর কথা বইতে পড়েছি তাদের নিজের চোখে সামনাসামনি দেখতে পাওয়া সত্যিই আনন্দের ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। তবে একটা কথা মনের ভেতরে খচখচ করতে লাগল – প্রকৃতির জীবনের মুক্ত প্রাণীদের এই যে, চিড়িয়াখানায় বন্দি করে রাখা রয়েছে, আমাদের আনন্দ দিতে গিয়ে এদের অসুখী করে রাখা হয়নি তো!


Discover more from সমবানী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

থেকে আরও পড়ুন

আপনি পছন্দ করতে পারেন

আর্কাইভ
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  

এই ক্যাটাগরির আরো খবর

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমরা ধরে নেব আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি চাইলে অপ্ট-আউট করতে পারেন৷ গ্রহণ করুন আরও পড়ুন

Discover more from সমবানী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading