সুবাশিত পদ্মফুলের সমারোহ আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলছে সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীদের। হাত বুলিয়ে একটু ছুয়ে দেখা, প্রিয়জনের খোপায় গুঁজে দেয়ার মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। কিশোর-কিশোরীরা খিলখিল শব্দে হেসে উঠছে বিশালকায় জলরাশিতে পদ্মফুলের সম্ভার দেখে। বাংলা আশ্বিন মাসের বৃষ্টি বিঘ্নিত এই সময়টিতে পদ্মফুলের শেষ সময়ের পরিণতি দেখতে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। চলছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার বিলে একটু আনন্দের খোঁজে।
রাজারহাট উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বিলটির অবস্থান ২৮৩ দশমিক ২৮ একর এলাকা জুড়ে। যার অধিকাংশ জায়গা বেহাত হয়ে গেছে। যেটুকু জায়গা রয়েছে তারই মধ্যে সাদা, গোলাপী ও সোনালী রঙের পদ্মফুল এখনো নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। বর্ষার পদধ্বণি পেলেই এখানে সমারোহ ঘটে হাজার হাজার পদ্মফুলের চকিত চাহনী।
বিশাল আয়তনের চাকিরপশার বিলটি রাজারহাট সদর ইউনিয়ন ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে ব্রহ্মপূত্র নদে গিয়ে মিশেছে। যুগ যুগ ধরে সরকারি এই বিলটি ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী দখলের কবলে পরে হারিয়ে ফেলেছে এর সৌন্দর্য ও কলেবর। দখল দুষণের কারণে এখন মাত্র ত্রিশ একরের মত জায়গায় ফোটে এই পদ্মফুল।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আজাহার আলীর সাথে গল্প করে জানা যায়, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে বৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে বিলটিতে পদ্মের উপস্থিতি সকলকে জানান দেয়। এরপর ভাদ্র ও আশ্বিন মাস পর্যন্ত গোটা বিল জুড়ে শোভা পায় সাদা, হলুদ ও সোনালী রঙের পদ্মফুলে। তখন নীল আকাশ থেকে হাজার হাজার তারকার চাদরে বিলটি সম্মোহন করে পথচারীদের।
তবে তিনি দু:খ করে জানান, প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এই বিলটি দৃষ্টিনন্দন হলেও যোগাযোগ প্রতিকূলতার কারণে সৌন্দর্য পিপাসুদের সমাগম হচ্ছে না সেভাবে। বিলে আসার পথটি সংকীর্ণ হওয়ায় সাধারণ যানবাহন আসতে চায় না। এছাড়াও বিলে ঘুরে ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নেই প্রয়োজনীয় নৌকা। ফলে অনেকে শখ করে আসলেও বিলে ঘুরতে না পারায় হতাশা নিয়ে ফিরে যান।
কুড়িগ্রাম শহরের কুমার পাড়া থেকে আসা দর্শনার্থী কল্পনা রানী জানান, এখানে নৌকা না থাকায় বিলটিতে যেতে পারছি না। ছোট ডিঙ্গি নৌকা আছে, যা দিয়ে পরিভ্রমণ করা সম্ভব না। মাঝারী মানের নৌকা থাকলে কাছ থেকে পদ্মফুল দেখা যেত, সেই আশা পুরণ হলো না। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে আগত দর্শনার্থী কলেজ শিক্ষক মোমতাজুল ইসলাম জানান, অনেক আশা নিয়ে পরিবারসহ এখানে এসেছি। কিন্তু দূর থেকে দেখা হলো, কাছ থেকে পদ্মফুল ছোঁয়া হলো না। এত ছোট নৌকা যে উঠতে ভয় পাচ্ছি। তাছাড়া সংকীর্ণ সড়কের কারণে অটোরিক্সাও শেষ মাথা পর্যন্ত যেতে পারে না। ফলে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি।
রাজারহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রহ্লাদ মন্ডল সৈকত জানান, সৌন্দর্যের লীলাভুমি চাকিরপশার বিলটিকে সেভাবে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। গুরুত্ব দেয়া হলে, এটিও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যেত। এখনো স্থানীয়ভাবে অথবা সরকারিভাবে সড়কপথসহ বিলে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হলে এই বিল থেকে প্রচুর আয় করতে পারবে স্থানীয়রা। জুটবে কাজের সুযোগ। সেই সাথে সৌন্দর্য পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে বিলটি।
© ২০২২ - ২০২৫ সমবানী কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত