
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিনাজপুরে এ বছর পানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষিদের মুখে চাপা কষ্ট। উৎপাদন ব্যয়, শ্রমিক মজুরি ও সার-কীটনাশকের দাম বহন করতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। কৃষকদের দাবি, এমন দামে পান বিক্রি করে ঘরভাড়া ও বরজের খরচই ওঠে না, লাভ তো দূরের কথা।
বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী উপকরণ পান। বাঙালির আতিথেয়তা থেকে শুরু করে সামাজিক ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে পান একটি অনিবার্য অংশ। উত্তরের জেলা দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি ও মাধবপাড়া এলাকায় এবার দেখা মিলছে একের পর এক সবুজ পানবরজের। পুরো এলাকার মাঠজুড়ে যেন সবুজ পাতার সমারোহ।
ভালো ফলন হলেও বাজারে পানির মতো দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানালেন চাষিরা।
কয়েকজন পানচাষী বলেন, আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। পানের দাম নেই। শ্রমিকের খরচ, সার-ওষুধ দিয়ে কিছুই থাকে না। বরজ সামলাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছি।
পানবরজে প্রতিদিন কাজ করা শ্রমিকরাও জানান, চাষিরা লাভ না করায় তারাও নিয়মিত মজুরি পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তায় থাকেন।
তারা আরো দ বলেন,ফলন ভালো, কাজও বেশি থাকে। কিন্তু বাজারে দাম নাই। চাষিরা আয় না করলে আমরাও টিকে থাকতে পারি না।
পানচাষিদের এমন সংকট প্রসঙ্গে কথা বলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম। তিনি জানান, পোকা-মাকড় দমনসহ সব ধরনের কারিগরি সহায়তা আমরা নিয়মিত দিচ্ছি। বরজে কোনো রোগ-বালাই দেখা দিলে তাৎক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দামের বিষয়টি ডিমান্ড আর সাপ্লাইয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ তাদের পাশে রয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫৪০ মেট্রিক টন। বংশ পরম্পরায় পান চাষ করে আসছেন এখানকার চাষিরা। বরজে রোগ প্রতিরোধ ও সঠিক পরিচর্যার জন্য কৃষি বিভাগ নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে যাচ্ছে।
চাষিদের আশা, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিলে আবারও লাভের মুখ দেখবে এ অঞ্চলের হাজারো পরিবার। অন্যথায় লোকসান গুণে ধীরে ধীরে অনেকেই পানের আবাদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হবেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
© ২০২২ - ২০২৫ সমবানী কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত