
গাজীপুরে এক রাতে পরপর তিনটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৩টার মধ্যে জেলার তিনটি পৃথক স্থানে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রত্যেকটি ঘটনার ধরন ছিল প্রায় একই—সড়কের পাশে থেমে থাকা বাসে এসে কয়েকজন দুর্বৃত্ত দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম অগ্নিকাণ্ডটি ঘটে রাতে সাড়ে ১০টার দিকে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের চক্রবর্তী এলাকায়। ওই সময় জ্যোতি পাম্পের পাশে একটি যাত্রীবাহী বাস দাঁড়িয়ে ছিল। বাসের নিচে শুয়ে এক মিস্ত্রি মেরামতের কাজ করছিলেন। ঠিক তখনই একটি মোটরসাইকেলে করে দুজন যুবক এসে হঠাৎ বাসের দিকে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মারে এবং মুহূর্তেই আগুন লেগে যায়। বাসের নিচে থাকা মিস্ত্রি প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালান। স্থানীয়রা ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে বাসের সামনের অংশ পুড়ে যায়।
এর প্রায় চার ঘণ্টা পর, রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে নগরীর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাসন এলাকায়। সেখানে সড়কের পাশে পার্ক করা ভিআইপি পরিবহনের একটি বাসে দুর্বৃত্তরা একইভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আগুনে বাসটির অভ্যন্তরীণ অংশ পুড়ে যায়, তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে।
তৃতীয় ঘটনা ঘটে একই সময়ে শ্রীপুরে, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে। সেখানে থেমে থাকা আরেকটি বাসে কয়েকজন অজ্ঞাত যুবক এসে দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এলাকাবাসীর দাবি, রাতের অন্ধকারে তারা মোটরসাইকেলের শব্দ শুনে বাইরে বের হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান। কাছের একটি মার্কেটের নিরাপত্তা প্রহরী বিষয়টি দেখে চিৎকার করে লোকজনকে ডেকে আনেন। পরে স্থানীয়রা মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ততক্ষণে বাসটির অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় কেউ আহত না হলেও ধারাবাহিকভাবে তিনটি স্থানে একই ধরনের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা ধারণা করছেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত নাশকতা হতে পারে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ডা. মো. জাবের সাদেক বলেন, “এক রাতে তিনটি স্থানে বাসে আগুন দেওয়ার খবর পেয়েছি। ঘটনাগুলো আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। দ্রুতই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
তিনি আরও জানান, রাতের অগ্নিকাণ্ডের তিনটি ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা করা হবে, যাতে বোঝা যায় কী ধরনের দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছিল।
এর আগে গত মাসেও গাজীপুরের টঙ্গী ও জয়দেবপুর এলাকায় একই কায়দায় দু-তিনটি বাসে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছিল। ফলে নতুন করে এই তিন অগ্নিকাণ্ডে আবারও জেলাজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পুলিশ শহরের প্রবেশ ও বের হওয়ার সড়কগুলোতে টহল জোরদার করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, সম্প্রতি রাজনৈতিক উত্তেজনা ও দেশজুড়ে চলমান পরিস্থিতির কারণে এই ধরনের আগুনের ঘটনাগুলো নাশকতা হিসেবে দেখা উচিত। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।
© ২০২২ - ২০২৫ সমবানী কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত